আমরা যে য়্যাপার্টমেন্টে থাকি তার জন্য আমাদের ভাড়া দিতে হয়, অথবা যে বাড়ি আমরা কিনি তার জন্য আমরা বন্ধকী ঋণ পরিশোধ করে থাকি। এই দুনিয়ায় আমাদের অস্তিত্বের জন্যও পৃথিবীর মালিকের প্রতি আমাদের একটি ঋণ রয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ হয় অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে ।
অন্যদের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করে থাকে এমন অনেক লোককে জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। 1957 সালে আমার থাকা-খাবার ব্যবস্থা নিয়ে আমি সমস্যার মুখোমুখি হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করতে আমার আরও এক বছর দরকার ছিল। এই সময়ে আল্লাহ ছুবাহানাহু তায়ালা প্রায় অলৌকিকভাবে আমাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। একদিন এক ভদ্রলোক আমার কাছে এসে বললেন যে ঢাকা হলের প্রভোস্ট আমার সাথে দেখা করতে চান। আমি দেরি না করেই তার সাথে দেখা করি। তিনি আমাকে বলেন যে এক ভদ্রলোক আমার এক বছরের জন্য ছাত্রাবাসের সমস্ত খরচ প্রদান করেছেন, এবং আমি যে কোনও সময় হলটিতে যেতে পারি। আমি কখনই জানতে পারিনি আমার জন্য এই উদার কাজটি কে করেছে। সেই একই ভদ্রলোক ইউনিভার্সিটির আমার দুই শিক্ষার্থীর হোস্টেলে থাকা খাবার ব্যয় বহন করেছিলেন । এরা দু’জনেই আমার মতো পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে পিএইচ, ডি. ডিগ্রি অর্জন করেছে।
আমি জানি বাংলাদেশের আরও এক ভদ্রলোকের কথা, যিনি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য অনেক কাজ করছেন। তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নুর মুহাম্মদ। তার সংগঠন এতিমখানা এবং দরিদ্র পরিবার থেকে উজ্জ্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসে তাদের শিক্ষার বন্দোবস্তু করে । ২০০৯ সালে আমি তার সংগঠনের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি বার্ষিক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম। তাদের কয়েকজন মাইক্রোফোনে কথা বলার সময় কেঁদে কেঁদে বলছিলো কীভাবে তাদের গর্ত থেকে উঠিয়ে এনে পড়াশুনার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
কয়েক বছর পরে আমি একটি বাংলাদেশি সংবাদপত্রে পড়েছিলাম ইউনিভারটির একজন সদ্য-নিযুক্ত শিক্ষকের গল্প। কাগজটি বলেছিল যে সে খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। আমি যুবককে টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করলাম তার বাবা কি করতেন। তিনি বলেন, “আমার বাবা একজন ভিক্ষুক ছিলেন।” আমি খুব খুশি হলাম যে সত্য কথা বলতে তিনি দ্বিধা বোধ করেননি ।
এই যুবকটি তখন বলেছিলেন যে তিনি আমাকে চেনেন । আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। তিনি বললেন যে ২০০৯ সালে আমি যখন ডঃ নুর মুহাম্মদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন আমার সাথে তার দেখা হয়েছিল। ডঃ নুর মুহাম্মদ তার ছেলের বিয়ের মাধ্যমে আমার আত্মীয় হন। ডাঃ নুর মুহাম্মদ অল্প বয়সের যুবকটিকে আবিষ্কার করে উত্তরবঙ্গে। সেখান থেকে এনে তাকে স্কুলে পাঠান। যুবকটি তাঁর মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ না করা অবধি ডক্টর নূর মুহাম্মদের বাড়িতে ছিলেন।
বন্ধুরা, আমার দুটি ভালোবাসা: আমার মাতৃভূমি এবং আমার গৃহীত দেশ। আমি আমার বিনীত উপায়ে আল্লাহর কাছে আমার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছি। আমি জনসাধারণের কাছে আমার এই কাজকর্ম সম্পর্কে কিছু বলিনা। তবে আপনি যদি দরিদ্র মানুষের জন্য আমরা কী করতে পারি তার কয়েকটি উদাহরণ জানতে চান, তাহলে আমাকে অনুরোধ করলে আমি মে মাসের ১৫ তারিখের পরে আপনাকে রিপটের একটি অনুলিপি পাঠাতে পারি ।
McGill University. Mount Royal in the background.
May be an image of nature, tree and sky