আমি একজন মাছের পোকা। যেখানেই পানি দেখি সেখানেই আমার বর্শি ফেলতে ইচ্ছা হয়। অতীতে আমি মাছ ধরেছি বাংলাদেশের পুকুরে, খালে, এবং কীর্তনখোলা নদীতে। এখন আমি মাছ ধরি ক্যানাডা ও আমেরিকার নদি, লেক, আটলান্টিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, ও গালফ অব মেক্সিকোতে। আমি শীতের সময় ক্যানাডার লেকের মাঝখানে গাড়ি নিয়ে গিয়ে বরফের ভেতর থেকে মাছ ধরি। আমি মে মাস থেকে শুরু করে অকটোবর পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় মাছ ধরি লেক শ্যামপ্লেনে ।
বস্টনে আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু আছেন। নুরুজ্জামান সাহেবও আমার মতো মাছ ধরার পাগল। তিনি দলবল নিয়ে বছরে দু’বার মন্ট্রিয়ালে আসেন মাছ ধরতে। বছর তিনেক আগে আমি তাকে নিয়ে আমার পন্টুন নৌকা করে শ্যামপ্লেন লেকে মাছ ধরতে যাই। আমরা কতক্ষন মাছ ধরছিলাম এবং কোথায় ছিলাম তা ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় সন্ধ্যার সময় আমরা লেকের এক পারের কাছে এসে গেলাম। আমি তখন লক্ষ্য করলাম যে ঐ জায়গাটা আমার অপরিচিত। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তখন দেখি দু’জন মানুষ একটা নৌকা থেকে মাছ ধরছে। তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমরা কোথায়। তারা বললেন আমরা আমেরিকার অনেকদূর ভেতরে চলে এসেছি। তারা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন আমার দেশ ক্যানাডা কোন দিকে।
আমি তখন বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। তবে আমেরিকার পুলিশ আমাদের ধরে নেবে সেজন্য নয়। আমার চিন্তা হচ্ছিলো আমার পক্ষে কেমন করে অতো বড়ো লেকের মাঝখান দিয়ে নৌকা চালিয়ে ক্যানাডা আশা সম্ভব হবে। ক্যানাডার কাছে এসে যখন দূর থেকে গাছপালা দেখতে পেলাম তখন আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।
শেষ করার আগে নুরুজ্জামান সাহেব সম্বন্ধে কয়েকটা কথা বলতে চাই। তিনি এম. আই. টি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন। ভাবি স্বাস্থ রক্ষা বিষয়ে ডাবল মাস্টার’স ডিগ্রি অর্জন করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভাই সাহেব কিছুদিন চাকরি করার পর একটা ব্যাবসা আরম্ভ করেন। আলহামদুলিল্লাহ তিনি এই ব্যবসায় অনেক সফলতা অর্জন করেন। আসল কথা হলো যে তার হৃদয়টা সাগরের মতো বড়ো। তিনি বস্টনে স্কুল বিল্ডিং-এর মতো একটা বড়ো বাড়ী তৈরী করেছেন। অতো বড়ো বাড়ী তৈরী করার উদ্দেশ্য হলো যে বস্টন এলাকায় যে সমস্ত বাংলাদেশীরা আসবে তাদের থাকার জায়গা না থাকলে তারা তার বাড়ীতে থাকবে। আমার ছেলে যখন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে কিডনি স্পেশালিস্ট হওয়ার জন্য পড়াশুনা করতো তখন তিনি এবং ভাবি আমার ছেলে ও তার পরিবারকে তাদের নিজেদের পরিবারের মানুষ হিসাবে দেখাশুনা করেছেন।
নুরুজ্জামান সাহেবের পূর্বপুরুষরা মালদাহ জেলার পান্ডুয়ায় বাস করতেন। নুরুজ্জামান সাহেব সেখানে মেয়েদের জন্য একটা আবাসিক হাই স্কুল তৈরী করেছেন এবং সে স্কুলটি চালাচ্ছেন। সেখানে গরীব ছাত্রীদের টিউশন ফি নাই। তারা স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুলে থাকে। তাদের জন্য কোচিং এবং খাওয়া দাওয়াও ফ্রি। দূরের গ্রাম থেকে যে গরীব মেয়েরা সেই স্কুলে পড়াশুনা করতে আসে তারা বিনা খরচে হোস্টেলে থাকে।
নুরুজ্জামান সাহেবের পাণ্ডুয়ার বাড়িতে যে সকল লোক কাজ করেছে তাদের প্রত্যেককে তিনি এখন পেনশন দেন।
বাংলাদেশে নুরুজ্জামান সাহেবের অবদান অনেক। তিনি হাই স্কুল ও কলেজের ৭৫-জন ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেন। তার উদ্দেশ্য হলো ৪০০ ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেয়া। বর্তমানে তিনি চাপাই নোয়াবগঞ্জে একটা কিডনি ডায়্যায়ালিসিস সেন্টার তৈরী করছেন। সেখানের চক্ষু হাসপাতালেও তার অবদান অনেক। এ ছাড়া তিনি তার অনেক গরীব আত্মীয়স্বজন ও চাপাই নোয়াবগঞ্জএলাকার অন্যান্য গরীব লোকদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেন।