মন্ট্রিয়াল শহরে অনেক রকম ফল পাওয়া যায়। আম, কাঁঠাল, আমরা, লিচু যা কিনতে চান তাই এখানে পাবেন। আমরা আমেরিকা, ক্যারিবীয় দেশগুলো ও দুনিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে ফল আমদানি করে থাকি। এখানে ফলের দামও বেশীনা। তাই আমি শুনেছি যে কেউর বাড়িতে ফল উপহার নিয়ে গেলে সেটা ভালো উপহার বিবেচনা করা হয়না। আর একটা কথা. ক্যানাডায় ভেজাল বলতে কিছু নাই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদেরকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি তারা ভেজাল কথাটার অর্থ জানে কিনা। তারা এই শব্দটা কখনো শোনেনি। যাই হোক, আমাদের ঘরে সব সময় অনেক রকম ফল থাকে। আমি যেহেতু চুকা খাদ্য পছন্দ করি, আমার স্ত্রী বিভিন্ন রকমের কমলালেবু কিনে রাখেন ।
প্রবাসে অনেক সময় কিছু করলে বা খেলে আমার বাংলাদেশের জীবনের কথা মনে পরে। গত রাতে কমলা খেতে খেতে আমার স্ত্রীকে আমি আমার গ্রামের জীবনের গল্প বলছিলাম। আমার বাবা শীতের মৌসুমে বছরে একবার এক হালি কমলা কিনতেন। আমরা ভাইরা প্রত্যেকে ভাগে পেতাম একটা কমলা। ভোরবেলা যখন গ্রামের কাঁচা রাস্তার উপর আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোঁয়াতাম তখন সেই কমলাটা খেতাম। আমার মনে হয় যে ক্যানাডায় বসে যে উচ্চ মানের কমলা খাচ্ছি তার চাইতে অনেক বেশি সুস্বাদু ছিল সেই আগুনের কাছে বসে খাওয়া কমলাটি।
আমার নানী ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী। আমার মামারা এবং খালাও ছিলেন তার মতো। আমি শুনেছি যে আমার মা-ও ছিলেন খুব সুন্দরী। আমার বাবা চাষাবাদের কাজ করতেন মাঠে। তাই রোদে পুড়ে তার শরীর হয়ে গিয়েছিল অনেকটা আফ্রিকার লোকের শরীরের মতো। আমাকেও দেখতে আমার বাবার মতো। আমিও আমার জীবনের প্রথম ১৯ বছর বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছি মাঠের তীব্র রোদে। পশ্চিম দেশের লোকরা অনেক টাকা খরচ করে সৈকতে যায় একটু শ্যামলা হওয়ার জন্য। তাছাড়া সানবার্ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা অনেক রকম লোশন ব্যবহার করে I আমাকে সৈকতেও যেতে হয়না বা লোশনও ব্যবহার করতে হয়না।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে দুপুর বেলা মাঠে কাজ করা ছিল একটা কষ্টের ব্যাপার । তাই ঐ সময় আমি আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশের অনেক বড়ো তেতুল গাছটার নিচে ঘাসের উপর দুই এক ঘন্টা ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিতাম। মাঝে মাঝে পিঁপড়া বা অন্য কোনো পোকা কানে ঢুকতে চেষ্টা করলে ঘুম ভেঙে যেত।
আমার স্ত্রী মনোযোগ দিয়ে আমার গল্পগুলো শুনলেন। তাকে অবশ্য কখনো দরিদ্রতার সম্মুখীন হতে হয়নি। গ্রামের জীবন সম্বন্ধেও তার জ্ঞান খুব কম। তবে আমার নাতি-নাতনিরা আমার জীবনের গল্পগুলো শুনতে খুব ভালোবাসে।