ইন্টারফেইথ স্কলারশিপ ফান্ড
INTERFAITH SCHOLARSHIP FUND
Montreal, December 25, 2021
উপরের ছবিটি এঁকেছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশাকার ও আমার বন্ধু বিখ্যাত শিল্পী হামিদুর রহমান সাহেব। তিনি আমার অনুরোধে ছবিখানা এঁকেছিলেন। আমি এই ছবিতে দেখতে চেয়েছিলাম আমার প্রিয় গরু, কৃষকদের লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করা, নৌকা ও মাঝিদের, এবং মহিলাদের পানির কলসি নিয়ে বাড়ি ফেরা। এই ছবিটি ঝুলছে আমার মন্ট্রিয়ালের বাড়ির বৈঠকখানার দেয়ালে।
ডক্টর আব্দুর রাব্ব
ইন্টারফেইথ স্কলারশিপ ফান্ড
INTERFAITH SCHOLARSHIP FUND
সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।” “ALL OF US FOR ALL, EACH ONE OF US FOR EACH.”
আমার চহঠা গ্রামবাসী ভাইবোনেরা :
আসসালামু আলাইকুম I আমি অত্যন্ত খুশি ও গর্বিত যে আজ আমাদের গ্রামের ঘরে ঘরে শিক্ষিত মানুষ। ১৯৩০ ও ১৯৪০ শতকে আমার বাল্য বয়সের সময় আমাদের গ্রামের প্রায় সমস্ত মুসলমানরাই ছিলেন অশিক্ষিত। আমার বাবা সোনামুদ্দিন মুন্সী সাহেব ছিলেন তখন আমাদের গ্রামের সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মুসলমান। তিনি প্রাইমারি স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি শেষ করেছিলেন। আমাদের বাড়ির মোমিন আলী সাহেবের বড়ো ছেলে জয়নাল আবেদীন সাহেব আমার বাবার পরে গ্রামের সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মুসলমান হন। তিনি বি.এম. কলেজ থেকে আই.এস.সি. ( এখনকার এইচ.এস.সি.) পরীক্ষা পাশ করেন।
আমাদের গ্রামের প্রবীণরা। আমার বাবা বাম থেকে তৃতীয় ব্যক্তি।
এ দু’জন দূরদর্শী মানুষ আমাদের গ্রামের মানুষদের আলোকিত করার জন্য একটা বিদ্যালয় স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। মুসলমানদের এলাকায় বিদ্যালয়ের জন্য ঘর না থাকায় তারা ঠিক করেন যে, আমাদের বাড়ি ও পূর্ব দিকের বাড়ির মাঝখান দিয়ে যে কাঁচা রাস্তাটি গিয়েছে, তার উপরই বিদ্যালয় বসবে। হলোও তাই। আমরা বাচ্চারা রাস্তার দু’পাশে দু’সারিতে মুখোমুখি বসতাম। আমাদের সাথে নিয়ে আসতাম একটা পুরানো পাটের বস্তা, তালপাতা, মাটির দোয়াত,
দোয়াতে কয়লার গুঁড়া পানিতে গুলে তৈরি করা কালি, ও বাঁশের কঞ্চির একদিক সরু করে কেটে তৈরী করা কলম। আমরা পাটের বস্তার উপর বসে তাল পাতার উপর লিখতাম। আমাদের নিয়মিত শিক্ষক ছিলেন নোয়াখালীর এক মৌলভি সাহেব। আমার বাবা মুন্সী সাহেবও ক্ষেত–খামারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে প্রতিদিন দু-তিন ঘন্টা পড়াতেন। তিনি বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক ছিলেন। মৌ লভী সাহেবকে বেতন দিতে হতো। তাঁর বেতন দেয়ার জন্য মুষ্ঠি-ভিক্ষা সংগ্রহ করার আয়োজন করা হয়। গ্রামের প্রত্যেক ঘরে একটি করে ছোট মাটির হাড়ি রাখা হতো।
জয়নাল আবেদীন
|
রাতের খাবারের জন্য ভাত রান্না করার আগে মহিলারা এক মুঠো করে চাল এ ই হাঁড়ির ভেতর ফেলে দিতেন। প্রত্যেক স প্তাহে আমরা ছেলেরাবাড়ি বাড়ি গিয়ে এ ভিক্ষার চাল সংগ্রহ করে আনতাম। সেই চাল বিক্রি
করে মৌলভী সাহেবের বেতন দেয়া হতো। বাড়িতে ভিক্ষুক আসলে তার ঝুড়িতে এক মুঠো চাল ফেলে দেয়া হতো। আমরা বিভিন্ন বাড়ি থেকে একই রকম জমানো চাল সংগ্রহ করে আনতাম। তাই সে চালকে বলা হতো মুষ্ঠি-ভিক্ষার চাল। আমিও ঐ
আমি সূর্যোদয়ের পর এই মাটির খোঁড়া থেকে পিয়াজ ও পোড়া মরিচ দিয়ে পান্তা
ভাত খেয়ে লা ঙ্গল–জোয়াল কাঁধে নিয়ে বলদ দুটো সহ মাঠে যেতাম হাল চাষ করতে।
দিতেন। প্রত্যেক সপ্তাহে আমরা ছেলেরা বাড়ি
|
স্কুলের ছাত্র
আমার প্রিয় তালপাতা ও গামছা ।
ছিলাম আমি চাই যে আমাদের গ্রামের সকল ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করুক । এই উদ্দেশ্যে আমি একটা স্কলারশিপ ফান্ড স্থাপন করতে চাই। আমি মাশাআল্লাহ এই ফান্ডে বারো লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি আশা করি যে অন্যান্য স্বচ্ছল গ্রামবাসীরা এই ফান্ডে তাদের অনুদান দিয়ে ফান্ডটাকে অনেক শক্তিশালী করে তুলবে। এই ফান্ডের নাম হবে
ইন্টারফেইথ স্কলারশিপ ফান্ড I
আমি এই ফান্ডের মুনাফা থেকে স্কলারশিপের মাধ্যমে চারজন মহান মানুষকে স্মরণ ও সন্মান করতে চাই। তারা হলেন সোনামুদ্দুন মুন্সী সাহেব, জয়নাল আবেদীন সাহেব, আমার বগার বাড়ির চাচা এলেমউদ্দিন আহমাদ সাহেব, ও রায়পয়সার চাচা শিল্পী আব্দুল লতিফ সাহেব । আমাদের গ্রামের জন্য সোনামু দ্দিন মুন্সী সাহেব ও জয়নাল আবেদীন সাহেবের অবদান অতুলনীয়। এলেমউদ্দিন আহমাদ সাহেব ও শিল্পী আব্দুল লতিফ সাহেবের সহয়তা না পেলে আমি কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পেতামনা। এলেমউদ্দিন চাচা দিয়েছেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন, এবং বইপত্র ও কাপড় চোপড় কেনার খরচ, আর চাচা আব্দুল লতিফ দায়িত্ব নিয়েছেন তার বাড়িতে আমার থাকা খাওয়ার । আব্দুল লতিফ চাচার স্ত্রী বিথী চাচীআম্মা আমাকে দিয়েছেন মায়ের ভালোবাসা ও যত্ন। এভাবেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করি।
এই চারজন ছাড়া আরো দুজনের নামে স্কলারশিপ দাওয়া হবে। তারা ডক্টর আব্দুর রাব্ব ও আয়শা আব্দুর রাব্ব। আমি আমার জীবনে যাকিছু অর্জন করেছি তাতে সহায়তা করেছে আমার স্ত্রী আয়শা।
ডানে শিল্পী আব্দুল লতিফ |
এলেমউদ্দিন আহমাদ
এই স্কলারশিপ ফান্ডের মূলধন কেউ কখনও স্পর্শ করতে পারবেনা। স্কলারশিপ কমিটি সারা বছরের মুনাফার টাকা চহঠার মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীদের ভেতর প্রতি জানুয়ারি মাসের প্রথম শুক্রবার নামাজের পর আমাদের গ্রামের স্কুল ঘরে সকল গ্রামবাসীদের সামনে সমান ভাগে ভাগ করে বন্টন করে দেবে। মোট স্কলারশিপ হবে ছ টা:
- সোনামুদ্দিন মুন্সী স্কলারশিপ
- জয়নাল আবেদীন স্কলারশিপ
- এলেমউদ্দিন আহ মাদ স্কলারশিপ
- শিল্পী আব্দুল লতিফ স্কলা র শিপ।
- ডক্টর আব্দুর রাব্ব স্কলা রশিপ।
- আয়শা আব্দুর রাব্ব স্কলা রশিপ।
স্কলা রশিপ কমিটি এভাবে তৈরী হবে :
- চেয়ারম্যান: চহঠা স্কুলের প্রধান শিক্ষক
- ভাইস চেয়ারম্যান: আমাদের গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম
- সেক্রেটারি : আমার ভাইয়ের ছেলে সাইফুল ইসলাম শাকিল
- মেম্বার: মুন্সী সাহেবের আত্মীয়: তার নাতি বারেকের ছেলে হাফিজুর রহমান
- মেম্বার: আবেদিন সাহেবের আত্মীয়: তার মেয়ে হাসিনা রানু।
- মেম্বার: এলেমদ্দিন আহমদের আত্মীয় শাহজাহান কমিশনার
- মেম্বার: শিল্পী আব্দুল লতিফের আত্মীয়: ..
আমি চাই যে আমাদের গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে তাদের আত্মীয়স্বজনরা স্কলারশিপ স্থাপন করেন। এই মুহূর্তে আমি নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করতে পারছি। অন্যদের নাম আপনারা যোগ করে নেবেন। প্রত্যেকটা স্কলারশিপের জন্য অন্তত এক লক্ষ্য টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
১. চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন
২. আলতাফ হোসাইন
৩. হাজেরা বেগম
৪. বীরউত্তম আব্দুস সাত্তার
৫. আব্দুল আলী
৬. আবু জাফর (ওহাব আলী )
৭. শামসের (আবুল হাসানের পিতা)
৮. হাকিম আলী তালুকদার
৯. আব্দুর রশিদ I ১০. আবু জাফর (ওহাব আলী)
আমার অন্যান্য কাজ
আমি চেষ্টা করেছি আমার গ্রামবাসী ও তথা বাংলাদেশী ভাইবোনদের আপদ বিপদের সময় তাদের পাশে দাঁড়াতে। এজন্য আমি আমার গ্রামে ও গ্রামের বাইরে কিছু কাজকর্ম করেছি এবং এখনো করছি। আমি চাই যে আমার অনুপস্থিতিতে আমার উত্তরাধিকা রীরা এবং আমার আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন তারা আমার কাজগুলো চালিয়ে যাবেন । এই কাজগুলো যাতে সুসম্পন্ন হয় তার দিকে আপনারা জনগণ লক্ষ্য রাখবেন। আপনাদের অবহতির জন্য আমার কাজগুলো আমার বাংলা বইখানায় বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। যতো দ্রুত সম্ভব আপনারা এই বইখানা পেয়ে যাবেন। এখানে আপনাদেরকে আমার কাজগুলোর একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলাম।
আপনারা জানেন যে আমাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য ইন্টাফেইথ কমিউনিটি সারভিসের ফান্ডে আমি রেখেছি ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়া আমাদের গ্রাম ও বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজের জন্য প্রত্যেক বছর আমাকে কয়েক লক্ষ্ টাকা খরচ করতে হয়। আমি অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাক্ষেত্র, চিকিৎসাক্ষেত্র, কর্মসংস্থান, বাসস্থান নির্মাণ ও দারিদ্র বিমোচন নিয়ে কিছু কাজ করে যাচ্ছি।
শিক্ষাক্ষেত্র
১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শিক্ষামূলক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা I
২। বরিশালের কাশীপুর হাইস্কুল এবং কলেজে একটি লাইব্রেরী বিল্ডিং তৈরি করা I
৩। ছয়টি মেধাবৃত্তির প্রতিষ্ঠা: চাহাঠা প্রাইমারি স্কুল, চৌমাথা মেয়েদের স্কুল, কাশিপুর হাই স্কুলে দুটা স্কলারশিপ, রায়পাসা প্রাইমারি স্কুল, রুইয়া প্রাইমারি স্কুল, এবং দাউদকান্দির শাহপুর স্কুল। এখন চহঠায় যোগ হবে আরো ৬ টা ।
৪। যশোরের একজন কলেজের শিক্ষার্থীকে আর্থিক সাহায্য: তার পরিবারের ভরপোষণ ও তার পড়াশোনার খরচ বহন করা। তার বাবা-মা দুজনই ছিলেন ভিখারী, আর সে নিজে এক বাড়িতে কাজ করতো ঝি হিসাবে। আমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তাদের আর এ সমস্ত কাজ করতে হয়নি । সেই ছাত্রী ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে তার মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করেছে।
৫I খুলনার একজন মাস্টার্স শিক্ষার্থীর হোস্টেলের ভাড়া, বোর্ড ফি ও অন্যান্য শিক্ষামূলক খরচ বহন: এই ছাত্রীও সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে তার মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করেছে।
৬ । রংপুরের একজন তরুন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীর পারিবারিক ও শিক্ষামূলক ব্যয় বহন: তার পড়াশোনা শেষ করতে আরো বছর তিনেক দরকার হতে পারে। আমি তার ভরণপোষণ ও পড়াশোনা, এবং তার পরিবারের খরচপত্র চালিয়ে যাচ্ছি।
৭ । বরিশালের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর থাকা খাওয়ার খরচ বহন করছি।
৮ । কিশোরগঞ্জের এক মেডিক্যাল ছাত্রীর দু‘বছরের প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের টিউশন ফি দিতে ও তার জন্য একটা কম্পিউটার কিনতে সাহায্য করেছি। চার-পাঁচ মাসের ভেতর সে তার মেডিক্যাল ডিগ্রি শেষ করবে।
৯ I উত্তর বাংলার একজন দরিদ্র শিক্ষার্থীর পরিবারের জন্য একখানা ঘর বানিয়ে দিয়েছি I
১০। আমি আমাদের গ্রামে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য একটি বিদ্যালয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের জন্য আলাদা একটি বিদ্যালয়
চালাচ্ছি। কোভিদ মহামারী আসার পর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক গ্রামবাসীদের ক্লাশগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
১১ । আমি আমাদের গ্রামের বিদ্যালয়ে একখানা শহীদ মিনার তৈরি করে দিয়েছি।
শহীদ মিনার I
১২। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী ঢাকার ভাসমান ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটা স্কুল চালাচ্ছে। আমি তার কাজে কিছু আর্থিক সহায়তা করি।
১৩। আমার এ. কে. স্কুলের এক শিক্ষকের নামে একখানা লাইব্রেরি তৈরী করা হয়েছে। এই মহান প্রচেস্টায় আমার কিছুটা আর্থিক অবদান আছে।
আয়শা আব্দুর রাব্ব কমিউনিটি সেন্টার ও মেডিক্যাল ক্লিনিক। |
স্বাস্থ্যসেবা
১৪। আমি একটি মেডিক্যাল ক্লিনিক চালাচ্ছি যেখানে গরিব মানুষেরা বিনামূল্যে প্রশিক্ষিত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেবা ও বিনা খরচে ঔষধ নিতে পারে।
অন্য রুগীরা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন।
|
ডাক্তার রুগী দেখছেন।
|
১৫ । মেডিক্যাল ক্লিনিকটি কমিউনিটি সেন্টার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।
১৬ । আমি আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ও কমিটির মেম্বারদের জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করে থাকি। কয়েক মাস আগেই এমন একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিলো। আরেকটি আয়োজন করা হয়েছিলো ইদ-উল ফিতর উৎযাপন উপলক্ষ্যে। আমরা প্রতি ইদ-উল ফিতর-এ সকল শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের ও স্কুল কমিটির সদস্যদের জন্য এই অনুষ্ঠানটি করতে চাই।
১৭। চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প।
নৈশভোজ I
১৮। আমি বরিশালের হার্ট ফাউণ্ডেশনের ভবন নির্মানে অর্থায়ন করেছি।
কর্মসংস্থান
১৯ । আমি দরিদ্র, বেকার ও শারীরিক ভাবে দক্ষ মানুষদের বিনা মূল্যে বেশ কয়েকটি রিক্সা এবং ভ্যান-রিক্সা সরবরাহ করেছি।
বাসস্থান
২০ । যাদের একদমই কোন থাকার জায়গা ছিলো না এমন মানুষদের জন্য আমি টিনের চালার ২২টি ঘর বানানোর টাকা দিয়েছি।
দারিদ্র বিমোচন ১
২০। আমি আমার গ্রামের ৫ জন খুবই দরিদ্র ও বয়স্ক মানুষকে মাসিক ভাতা দিচ্ছি। ছবিতে তাদের দুজন।
এরা পাঁচ জনের দু’জন মানুষ যাদেরকে মাসিক ভাতা দেয়া হয়। |
২১। আমি মাঝে মাঝে আমাদের গ্রামের প্রায় ২০ জন দরিদ্র ছেলেমেয়েদেরকে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকি। মুরুব্বীদেরকেও এভাবে আপ্যায়ন করা হয়।
মুরুব্বিদের জন্য মধ্যাহ্নের খাবার।
২২ । শীতবস্ত্র বিতরণ: আমি প্রতি শীতে তিন-চারটি গ্রামের দরিদ্র মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করি।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
২৩ । আমি বাংলাদেশে চারটি মসজিদ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারের জন্য অর্থায়ন করেছি। গত তিন-চার মাসে রুইয়ার মসজিদ পেয়েছে তিন লক্ষ্ টাকা, চহঠা মসজিদ দুই লক্ষ্ টাকা, পশ্চিম পাড়ার মসজিদ এক লক্ষ্য টাকা, আর মাধপ্পাসার মসজিদ এক লক্ষ্ টাকা।
করোনা মহামারীকালীন সময়ে মানুষকে সহায়তা করার প্রচেষ্টা I
২৪। যেহেতু অনেক মানুষের কাজ ছিলোনা, আমরা গরিব মানুষদেরকে আর্থিক সাহায্য দেয়ার উপর জোর দিয়েছি। তাই আমরা বেশিরভাগ অভাবী লোককে নগদ অর্থ এবং কিছু সংখক মানুষকে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। এ পর্যন্ত আমরা ৯০০ পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হয়েছে হয় ৫০০ টাকা ক্যাশ, অথবা ওই একই অংকের কেনা খাদ্য সামগ্রী। এছাড়া দুটি এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে মোট দুই লক্ষ টাকা I আমাদের করোনা রিলিফের মোট খরচ আট থেকে দশ লক্ষ্য টাকা I
|
২৫। বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি ।
২৬ । আমার নিজের আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য করা ।
আমি আমার নিজের আত্মীয়স্বজনকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করি। আমার অনেক গরিব আত্মীয়-স্বজন আছে। তাদের অনেককেই শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিয়ের খরচ দিয়ে সাহায্য করতে হয়। আমার এমন আত্মীয়দের কয়েকজন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী সম্পন্ন করেছে।
উপসংহার
আমি আমার গ্রামবাসী ভাইবোনদেরকে ভালোবাসি। আমি আরো ভালোবাসি আমার গ্রামের গাছপালা, ধানক্ষেত, পুকুর-ডোবা, লতা-পাতা, গরু-ছাগল, কাদা-মাটি–সবকিছু। চহঠা গ্রামে জন্ম নিয়ে আমি ধন্য ও গর্বিত। আমার ছোট বয়সে আপনারা আমার যত্ন নিয়েছেন I এজন্য আমি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি এখন আমার জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। আপনারা দোয়া করবেন আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন যেন আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখেন, এবং ওপার থেকে যখন ডাক আসবে তখন যেন আল্লাহ আমার যাত্রা সহজ করে দেন।
আমি চেষ্টা করেছি সুখে-দুঃখে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে। আমার অনুপস্থিতেও আমার অবদান আপনাদের, বিশেষ করে আমার গরিব-দুঃখী ভাইবোনদের, উপকারে আসে সেজন্য রেখে গেলাম ক্লিনিক-কমিউনিটি সেন্টার বিল্ডিংটি, এবং ক্যাশ ও স্কলারশিপের টাকা নিয়ে মোট ৪৮ ( আটচল্লিশ ) লক্ষ টাকা। এ টাকা কোথায় ও কিভাবে আছে তা আমি পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি।
১. সমিতির নিয়মিত কাজ চালাবার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা: ইন্টারফেইথ কমিউনিটি সার্ভিস একাউন্ট, রূপালী ব্যাংক নতুল্লাবাজ I
২, চহঠা গ্রামের ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপের জন্য ১ ২ লক্ষ্ টাকা : ইন্টারফেইথ স্কলারশিপ ফান্ড, রূপালী ব্যাংক, নতুল্লাবাজ I
৩. বিভিন্য স্কুল-কলেজে ছ’টা স্কলারশিপের ৬ লক্ষ্ টাকা ।
আপনারা লক্ষ্য রাখবেন বিভিন্ন ফান্ডের টাকা যেন ঠিকমতো ব্যয় করা হয় I দাউদকান্দী স্কুলের স্কলারশিপ ছাড়া আপনারা অন্য সমস্ত স্কলারশিপের খবর নিতে পারেন।
খুদা হাফিজ।