গতকাল আমাদের বাড়িতে নৈশভোজের জন্য এসেছিল একজন রাজকুমারী। সাধারণত আমরা মাছ, ভাত ও তরিতরকারি দিয়েই ডিনার শেষ করি। কিন্তু গতকাল আমরা একজন রাজকুমারীর বিশেষ বিশেষ পছন্দের খাবার জিনিসগুলো কিনতে দেশী দোকানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা পেলাম ভালো আম, কাঠাল, লিচু, কাকরোল, পটল, আরো কত কি ! আমার স্ত্রী আমাদের বিশেষ অতিথির জন্য রান্না কবলেন টরন্টো থেকে আমার ভাগ্নের আনা থানকুনি পাতা, আমাদের ফ্রেন্স কার্পেন্টারের দেওয়া হরিণের মাংস; বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা কাতলা মাছ, কাকরোল, পটল, ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি পরিবেশন করলেন রসগোল্লা ও চমচম । কে এই রাজকন্যা যার জন্য এরকম বিশেষ ভোজ প্রস্তুত করা হলো? আমাদের নিজেদের নাতনি আঠারো বছর বয়সী আলিয়া। সে ছয়টি নাতি-নাতনির মধ্যে একমাত্র নাতনি এবং সবার ছোট। একমাত্র সে ই আমাদের মন্ট্রিয়াল সহরে থাকে। অন্য সকল নাতিরা কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন শহরে বসবাস করছে। তাদের তিনজন বিয়ে করেছে। এখন আমাদের একটি পুঁতিও আছে।
আলিয়া বাংলাদেশী খাবার পছন্দ করে। এছাড়া সে সবসময় তার নানীর রান্না করা খাবার খেতে ভালোবাসে। আমাদের পরিবারের একটা ঐতিহ্য আছে। আমরা রাতের খাবারের টেবিলে তরুণ তরুণীদের জীবনের সেইদিনের ঘটনাগুলো, ধর্মের বিষয়, নৈতিকতা এবং স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলো আলোচনা করি। আমরা ডাইনিং টেবিলের আলোচনাকে তরুণ তরুণীদের শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া বলে মনে করি। এই বৈঠক থেকে প্রাপ্তবয়স্কদেরও জানার সুযোগ হয় তরুণদের জীবনে কী ঘটছে। গতকাল আমরা মেডিসিন শিক্ষার ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম । কথা হচ্ছিলো আলিয়া কোন ক্ষেত্রে তার এস্পেলাইজেসন করবে । আমি চক্ষুবিদ্যার পরামর্শ দিচ্ছিলাম কারণ চোখের কাজ দ্রুত, পরিষ্কার এবং এতে খুব বেশি ইমার্জেন্সি কাজ নেই। আমি বলছিলাম যে একজন মহিলার যদি নিজের পরিবার থাকে তাহলে তারজন্য একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাজ সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত হবে। আলিয়ার ঝোক হলো বাচ্চাদের ডাক্তারির দিকে কারণ সে বাচ্চাদের ভালোবাসে। তবে সে নিশ্চিত যে সে DOCTORS WITHOUT BORDERS-এর সাথে গরিব দেশে গিয়ে মানুষের সেবা করবে।
আমার সমস্ত নাতিনাতনীরা আমার কাছ থেকে গল্প শুনতে ভালোবাসে। আসলে আলিয়ার অনুরোধে তার জন্য এখন “STORIES FROM THE EAST AND THE WEST” শিরোনামের একখানা বই লিখছি। আমি গতকাল খাবার টেবিলেও তাকে কয়েকটি গল্প বললাম।
আমার পায়ের আঙুলের নকগুলো কাটতে কষ্ট হয়। তাই আলিয়া মাঝে মাঝে আমার সেই নকগুলো কেটে দেয় । গতকাল ডিনার শেষে আলিয়া প্রথম গরম পানি ও সবান দিয়ে আমার পা’দুটো সুন্দর করে পরিষ্কার করে দেয়। এর পর সে আমার নকগুলো যত্ন করে কেটে দেয়। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আলিয়া যেন অনেক বড়ো ডাক্তার হয়ে গরিব মানুষের সেবা করে, এবং সুস্বাস্থ ও দীর্ঘজীবী হয়।


