• ড. হামিদ রাব্ব  

আমার ও আমার র্স্ত্রীর  দুটো পরিবারই শিক্ষকদের  পরিবার। আমার বাবা হাল চাষ করার মাঝে মাঝে এসে আমাদেরকে স্কুলে পড়াতেন। তখন এই স্কুলটি বসত গ্রামের কাঁচা রাস্তার উপর।  আমরা ছাত্ৰৱা বসতাম পুরানো পাটের বস্তার উপর। আমরা লিখতাম তাল পাতায়। আমরা কাঠকয়লা পাউডার পানিতে ভিজিয়ে কালি হিসেবে ব্যবহার করতাম, এবং একদিক শুরু করা বাঁশের কঞ্চির  কলম দিয়ে লিখতাম।

আমি নিজে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় পূর্ব ও পশ্চিম বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে অধ্যাপনা করেছি। আমার শ্বশুরের ঘরের চারজন পুরুষ সদস্যই অধ্যাপকের কাজ করতেন।  আমরা গর্বিত যে আমাদের পুত্র ড. প্রফেসর হামিদ রাব্বও  শিক্ষকতা  তার পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে।

ক্যানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হওয়া একটা কঠিন ব্যাপার।  এদেশে সর্বশ্রেষ্ট পেশা মেডিসিন। তাই এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা খুব শক্ত । তবুও মাশাল্লাহ হামিদ বিনা ইন্টারভিউতে একটা বড়ো স্কলারশিপ নিয়ে ম্যাকগিল মেডিক্যাল স্কুলে ঢোকে।  মেডিসিনের ডিন তাকে ডেকে বললেন, “তোমার কলেজকি সব বিষয়ে শুধু ১০০% মার্ক দেয় ? হামিদের ২৪টা  কোর্সের প্রায় সবটায়ই পারফেক্ট মার্ক ছিল। এর পর তিনি বললেন, “সেপ্টেম্বর মাসে তোমার সাথে দেখা হবে। ” উত্তর আমেরিকায় ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে।  হামিদ ম্যাকগিল থেকে অতি অল্প বয়সে ডিস্টিংশন নিয়ে এম. ডি. দিগ্র্রী অর্জন করে।

এরপর রেকর্ড সময়ের ভেতর সে ক্যানাডা ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাবল এম.আর. সি. পি. ডিগ্রি অর্জন করে, এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যাললয়ে কিডনি এস্পেশালিস্ট হয়।  এখন সে আমেরিকার এক নম্বর মেডিক্যাল উনিভার্সিটি ও হাসপাতাল জন্স হপকিন্স উনিভার্সিটির পূর্ণ প্রফেসর ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ডিরেক্টর।

হামিদ সম্পর্কে আরও কিছু বলার আগে আমি বলতে চাই যে আমেরিকান আইন অনুসারে, আমি তার রোগীদের নাম সনাক্ত করতে পারবোনা।

হামিদের কাজের তিনটি দিক আছে: শিক্ষকতা, গবেষণা  এবং রোগীর চিকিৎসা । মাশাল্লাহ তাকে দক্ষ শিক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একবার সে তার কিডনি স্পেশালিটি শিক্ষার্থীদের কাছে হাসপাতালের একজন রোগীর রোগ ব্যাখ্যা করছিলো।  উপস্থাপনা শেষে  রোগী উঠে দাঁড়ালেন এবং হামিদের ঘাড়ের উপর  হাত রেখে বললেন, “ইয়াং ম্যান, তুমি একদিন একজন ভাল ডাক্তার হবে।” রোগী সাহেব  ভেবেছিলেন  যে সেই তরুণ ছেলেটি ছিল একজন ছাত্র, এবং অন্যান্য বয়স্ক ব্যক্তিরা ডাক্তার। এই  রোগী ছিলেন একজন আমেরিকান নেতা যার নাম বিশ্বের বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষ জানে।

আরেকদিন হামিদকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হার্ভার্ডের ডাক্তার এবং ছাত্রদের শেখানোর জন্য কিভাবে একটি অত্যন্ত কঠিন রোগ নির্ণয় করা যায়। হামিদকে একটি হলের কয়েকশো  ডাক্তার এবং ছাত্রদের সামনে এই রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি পরীক্ষা করে ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল। সেখানে কয়েকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরাও উপস্থিত ছিলেন। যখন  হামিদ তার রায় দেয় তখন চার দিক থেকে ধ্বনি আসে, “এটা সম্ভব না।” আসলে দেখা গেলো যে হামিদের রোগ নির্ণয়নই ঠিক।  সে কীভাবে এই রোগটি  নির্ণয় করতে পারলো জানতে চাইলে সে বললো, “My guts.” আমার মনে হয় এটা ছিল তার অন্তঃদৃষ্টি। 

মাশাল্লাহ হামিদ গবেষণায় পারদর্শী। সে তার গবেষণার জন্য বহু মিলিয়ন ডলারের গ্রান্ট পেয়েছে। সে তার গবেষণায় সহায়তা করার জন্য তার গবেষণাগারে অনেক ডাক্তার এবং পিএইচ. ডি স্কলার নিয়োগ করে। এ পর্যন্ত সে কিডনি রোগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার করেছে। এই আবিষ্কারগুলি অগণিত মানুষের জীবন রক্ষা করছে। সে  কোভিড সংকটের সময় আবিষ্কার করে যে কোভিড রোগীদের কিডনি নিরাপদে অন্য রোগীদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। জন্স  হপকিন্স ইউনিভার্সিটি দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য তার আবিষ্কারের তথ্য ব্যবহার করে। তার দুই জুনিয়র সহকর্মী তাদের আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। অনেকেই মনে করেন হামিদ তার আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পাবে।

হামিদের  তিন শতাধিক গবেষণা প্রকাশনা রয়েছে। তার কিছু লেখা বিশ্বের অনেক মেডিলক কলেজে পাঠ্য বই হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেক সরকারই হামিদের পরামর্শ অনুযায়ী গবেষণাকারী  এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শত শত  মিলিয়ন ডলার বিতরণ করে।

হামিদ একজন স্বনামধন্য নিরাময়কারী হিসেবে পরিচিত। আমেরিকার অনেক ডাক্তার এবং হাসপাতাল তাদের কঠিন রোগীদের চিকিৎসার জন্য তার কাছে পাঠায়। অনেক রাজা, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য সেলিব্রিটিরা  তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। রাজা, রাণী ও অন্যান্যদের চিকিৎসার জন্য তাকে অনেক সময় বিদেশ ভ্রমণ করতে হয়। সম্প্রতি একজন রাজা তার নিজের প্রাইভেট গালফ-স্ট্রিম ৫ বিমান পাঠিয়েছেন তাকে আমেরিকা থেকে রাজার রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য I এটি একটি দুই যাত্রীবাহী বিমান যা ৫৫,000 ফুট উচ্চতায় উড়ে এবং রিফুয়েলিং ছাড়াই12,000 কিলোমিটার যেতে পারে।   আরেকবার একজন রাজার পরিবার তাদের 853–জন মানুষ  বহনকারী A ৩৮০ প্রাইভেট  বিমান পাঠিয়েছিল তাকে আমেরিয়া থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।  আরেক রাজার মা সবসময় তার নিজের বোয়িং ৭৪৭ বিমানে আমেরিকায় হামিদের সাথে দেখা করতে আসতেন। হামিদ আমাদের প্রাইম মিনিস্টার সেইখ হাসিনারও চিকিৎসক।  প্রথম যখন হামিদের সাথে তার দেখা হলো তখন তিনি মুগ্ধ হয়ে দুনিয়ার অনেক মানুষদেরকে কল করে বললেন, “দেখুন এসে আমাদের বাংলাদেশী ছেলে আমেরিকায় কোথায় পৌঁছেছে। ” তিনি তার ছেলের বাড়িতে  হামিদ ও তার পরিবারকে নিজের হাতে বাংলাদেশী খাবার রান্না করে খাওয়ালেন।

আমরা গর্বিত যে তার অনেক অর্জন থাকা সত্ত্বেও হামিদ অত্যন্ত সহজ ও সরল জীবন যাপন করে।  সে কখনও নিজেকে বড়ো মনে করেনা   সে  নম্র, ভদ্র এবং সমস্ত মানুষকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। আমাদের বরিশাল জেলার কাশিপুরের বেগম আয়শা রাব্ব ও ড. আব্দুর রাব্বের পুত্র হামিদের সুস্বাস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।