Helena Parvin, Khulna
ডক্টর আব্দুর রাব্ব ছিলেন বরিশালের এক দরিদ্র কৃষকের সন্তান। প্রথম জীবনে তাকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্ষেতে হাল চাষ, ধান কাটা, ঝোপ থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, মাছ ধরা ইত্যাদি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো । আল্লাহর কি ইচ্ছা! পরবর্তীতে তিনি ক্যানাডার একটি বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি থেকে সর্বোচ্চ পিএইচ. ডি ডিগ্রী অর্জন করেন, এবং চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তার ছেলে একজন জগৎ বিখ্যাত কিডনির ডাক্তার ও গবেষক। তার ছ’জন নাতি-নাতনিরা ক্যানাডা ও আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় সুশিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত।
ডক্টর আব্দুর রাব্ব কখনই তার অতীতকে ভুলে যাননি। তিনি তার বাংলাদেশী ভাইবোনদের জন্য অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি তার নিজের জেলা বরিশাল, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্দা ও দিনাজপুরে প্রচুর সেবামূলক কাজ করছেন। বর্তমান পোস্টটিতে আমি তার যশোর ও খুলনার কাজকর্মগুলো আলোচনা করবো।
কয়েক বছর আগে একদিন রাত ১০টার দিকে ডক্টর আব্দুর রাব্ব ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলেন যে যশোরের এক শিক্ষার্থী ফার্স্ট ক্লাস সহ অনার্স ডিগ্রি শেষ করেছে। তিনি আরো জানলেন যে এই ছাত্রীর বাবা-মা দুজনই ছিলেন ভিক্ষুক, এবং ছাত্রীটি নিজেও এক বাড়িতে ঝি-এর কাজ করতো। আমাদের প্রফেসর সাহেব কখনো দরকারি কাজ ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখেননা। তিনি ক্যানাডা থেকে তিন ঘন্টার ভেতর বি. এল. কলেজের প্রিন্সিপাল, ঐ কলেজের একজন প্রফেসর, একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক, ও মেয়েটি যার ঘরে ঝি-এর কাজ করতো তার সাথে কথা বলে মেয়েটি সম্বন্ধে সমস্ত খবর সংগ্রহ করলেন । পরদিন মেয়েটির সাথে কথা বলার পর (১) তার বাবা-মাকে যাতে আর ভিক্ষা করতে না হয় সেজন্য এক বছরের জন্য তাদের পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করার বন্দোবস্ত করলেন, এবং (২) মেয়েটির যাতে অন্যের বাড়ি কাজ করতে না হয় তার জন্য তার এক বছরের লেখাপড়ার খরচ বহন করার ব্যবস্থা করলেন। আলহামদুলিল্লাহ মেয়েটি এক বছর পর আবার ফার্স্ট ক্লাস সহ তার মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করেছে।
যেহেতু মেয়েটির পরিবার গৃহহীন ছিল, ডক্টর আব্দুর রাব্ব যশোরের ডিসি ড. হুমায়ুন কবিরের শরণাপন্ন হন। ড. কবির ছিলেন একজন মানুষের দরদী ডিসি। তিনি এই গৃহহীন পরিবারটিকে এক খন্ড খাস জমি দেন। ঐ জমিতে একটি ছোট ঘর নির্মাণের জন্য ড. কবির ও ডক্টর আব্দুর রাব্ব অনুদান দেন।
ডক্টর আব্দুর রাব্ব বি.এল. কলেজের আরেকটি ছাত্রীর দেড় বছরের থাকা খাওয়ার খরচ বহন করেন। সেই সময়ে ছাত্রীটি তার মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে, এবং তার বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
ডক্টর আব্দুর রাব্ব যশোরে একটি মসজিদ নির্মাণে তার আর্থিক অবদান রাখেন।
আমি খুলনা শহরের 40 কিলোমিটার উত্তরে একটি গ্রাম অঞ্চলে বাস করি। গত কয়েক মাসে আমাদের এলাকায় একটি আশ্চর্জনক ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় আট মাস আগে আমাদের এলাকার একজন মানুষ ডক্টর আব্দুর রাব্বের ফেসবুক বন্ধু হন। এই মানুষটির মাধ্যমে আরো অনেক মানুষ ডক্টর আব্দুর রাব্বের সাথে বন্ধুত্ব করে। অদূর ভবিষ্যতে এই বন্ধুত্ব আত্নীয়তায় পরিণত হয়। তারা সকলে ডক্টর আব্দুর রাব্বকে ভালোবাসে, এবং ডক্টর আব্দুর রাব্ব তাদেরকে ভালবাসে। ডক্টর আব্দুর রাব্ব এখন তাদের মিয়াভাই, দাদাভাই, নানাভাই, মামা, ইত্যাদি। আসলে তিনি এই পরিবারগুলোর একটা অংশ হয়ে গেছেন। ড.আব্দুর রাব্ব আমাদের যুবক যুবতীদের বিয়ের সাথে জড়িত হচ্ছেন, ছাত্রছাত্রীদের দের নির্দেশনা দিচ্ছেন, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার এবং কাপড় চোপড় কিনছেন। পাঠক জেনে অবাক হবেন যে ক্যানাডার এই প্রবীণ অধ্যাপক পরামর্শ দিচ্ছেন খুলনার মার্কেট থেকে কী ধরণের দুধের গাভী কেনা উচিত, গরুকে কি ধরনের খাবার দিতে হবে, ক্ষেতে কি কি শাক-সবজি চাষ করা উচিত, এবং কোন ধরণের মাছের পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে। তিনি পুকুরের ঘাট এবং ঘরের সংস্কারের ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন।
আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে ডক্টর আব্দুর রাব্ব স্থানীয় এতিমখানাকে একটি কংক্রিটের মেঝ তৈরী এবং অন্যান্য প্রয়োজনিয় কাজের জন্য একটি বড় অনুদান প্রদান করেছেন।এতিখানার এতিম ও অসহায়রা যখন তার জন্য দোয়া করেন, তারা চোখের জল ফেলেন।
আমার এলাকার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেদিনের জন্য, যেদিন ডক্টর আব্দুর রাব্ব কানাডা থেকে এসে আমাদের সাথে দেখা করবেন। আমার বিশ্বাস আল্লাহ এতিমদের দোয়া কবুল করবেন।
আমরা আল্লাহর কাছে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
১. ডক্টর আব্দুর রাব্ব।
২. মেয়েদের এতিমখানা।