এবার ভাষা আন্দোলনে একুশে পদক পাচ্ছেন খালেদা মনযুর–ই–খুদা।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমি একুশে পদক নির্বাচন কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
খালেদা আপা একজন অসাধারণ নারী। আমি তাকে ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে চিনি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করেছি। তিনি আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন । তাই তাকে আমি খালেদা আপা বলে ডাকতাম।
মাস্টারস ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর তিনি মনোবিজ্ঞানে উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান i সেখানে তিনি বাংলাদেশের গৌরব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক এবং “কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের” লেখক ড. কুদরাত-এ-খুদার পুত্র গবেষক ড. মনজুর -এ-খুদাকে বিয়ে করেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি, এবং ১৯৬৩ সালে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে ডক্টরেট ডিগ্রি করার জন্য ক্যানাডা চলে আসি ।
খালেদা আপা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিখ্যাত ছাত্রী ছিলেন। তিনি একজন খুব সুন্দরী তরুণী ছিলেন। তিনি বেশিরভাগ সময় প্রশস্ত লাল রংয়ের বর্ডার সহ সাদা শাড়ি পরতেন। তিনি এক বিশেষ ধরনের জুতা পরতেন, এবং তার হাঁটার স্টাইলও ছিল অনন্য।
খালেদা আপা ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্র সংগীত গায়িকা ছিলেন। তিনি গান না গাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হতো না। তিনি অল্প বয়স থেকেই গল্প এবং নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন। । প্রথম দিকে তাঁর লেখাগুলো প্রকাশিত হতো বেগম পত্রিকায় । আজ তার প্রকাশিত সমস্ত বইগুলো যদি একত্রিত করা হয়, তাহলে সেগুলি একটি বইয়ের বিশাল স্তূপ মনে হবে।
খালেদা আপার জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা ছিল অদম্য। তিনি ১৯৮৪ সালে ক্যানাডায় আমার শহর মন্ট্রিয়ালে মাইগ্রেট করেন। সেই সময়ে তিনি ছিলেন নাতি-নাতনির নানী। তবুও তিনি আবার মন্ট্রিযালের কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে একজন ছাত্রী হিসাবে যোগদান করেন, এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে আরেকটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। আমি নিশ্চিত যে তাকে যদি তার ছেলের সাথে বসবাসের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না হতো, তাহলে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর পি. এইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করতেন।
খালেদা আপা একজন গ্লোব-ট্রটার ছিলেন। তিনি বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন, এবং সেই ভ্রমণের উপর বই লিখেছেন।
আমি অত্যন্ত খুশি যে তার মন্ট্রিয়ালে অবস্থান করার সময় খালেদা আপা আমার বেয়ান সাহেবা হন। আমাদের ছেলে ডাঃ হামিদ রাব্ব তার ছোট মেয়ে নওশীনকে বিয়ে করে। আমি ১৯৫০ এর দশকে যেভাবে খালেদা আপাকে সম্বোধন করেছি এখনও ঠিক সেভাবেই তাকে সম্বোধন করি।
আমি সৌভাগ্যবান যে আমার কাছের দুজন মানুষ একুশের পদক পেয়েছেন: খালেদা আপা এবং আমার চাচা শিল্পী আবদুল লতিফ।