ক্যানাডায় বাংলাদেশী ও বরিশালিদের আসল ইতিহাস মাত্র ৪০ বছরের। এই অল্প সময়ের ভেতর তারা যে উন্নতি করেছে তা অতুলনীয়। আমি মন্ট্রিয়ালের একজন বুড়ো মানুষ। আমার বয়স প্রায় ৮৫ বছর। এছাড়া আমি এই শহরে এসেছি ১৯৬৩ সালে, অর্থাৎ ৫৭ বছর আগে। তখন এখানে দু’জন বাংলাদেশী ছিলেন – একজন বরিশালি এবং আর একজন কুমিল্লার। এর পর ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে প্রত্যেক বছর ২, ৪, ১০ জন করে বাংলাদেশিরা এসেছেন । ১৯৮১ – ১৯৮৩ সালে হঠাৎ অনেক বাংলাদেশি তরুণ তরুণীরা আসলেন শরণার্থী হিসাবে। যেহেতু আমাদের প্রভিন্সে ফরাসী ভাষার প্রাধান্য, অনেক বাংলাদেশি শরণার্থী এখান থেকে চলে গেলেন অন্যান্য প্রভিন্সে। এখন ক্যানাডায় বাংলাদেশিদের সংখা ৭০ – ৭৫ হাজার হবে। মন্ট্রিয়্লে আমাদের সংখ্যা হবে ১৫ থেকে ২০ হাজার। এদের ভেতর বরিশালিদের সংখা কত তা আমার জানা নাই।
প্রথম ২/১ বছর তরুণ বাংলাদেশিদের কষ্ট করতে হয়েছে কারণ তাদের ক্যানাডিয়ান শিক্ষা ছিলোনা। তারা ছোটোখাটো কাজ করে জীবিকা অর্জন করেছেন । তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করেন। তাদের অনেকেই ব্যবসায় সফল হয়েছেন । এই সফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে বরিশালের ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। আমাদের শহরে বেশ কয়েকজন বরিশালি বন্ধুরা বড়ো ব্যবসার মালিক। সেদিন আমাদের এক বরিশালি ছোট ভাই আমাকে বললেন, “স্যার, আমি এই সপ্তায় কয়েকটা বিল্ডিং কিনলাম।” আমি জিজ্ঞেস করলাম ” ক’টা বিল্ডিং এবং কোথায় ?” তিনি বললেন, ” ”’…রাস্তার উপর একটা পুরো ব্লক। ১১০-টা বিল্ডিং।” “কত দাম? ” উনি বললেন, “৫০ বা ৭০ লক্ষ ডলার।” ( আমার টাকার অঙ্কটা পরিষ্কার মনে নাই।) আমার মনে হয় তার ৪৫০ – ৫০০ ভাড়ার ফ্লাট আছে। আমি তাকে সন্মান করি। আমি যখনই কোনো ভালো কাজ হাতে নেই, আমি তার কাছে যাই ডোনেশনের জন্য। তিনি কখনও আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননা। সেদিনও আমাদের কিছু বাংলাদেশী ভাইবোনদের সাহায্যের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। ওনাকে টেলিফোন করার সাথে সাথে উনি ১,০০০- ডলার দিয়ে দিলেন I আমি আশা করি আমাদের বরিশালি ও অন্যান্য জেলার ধনি ক্যানাডিয়ানরা বাংলাদেশে তাদের নিজেদের এলাকায় মানুষের দুঃখ দুর্দশা মোচন করতে চেষ্টা করেন।
একটা বড়ো সুখবর হলো যে আমাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তাদের পড়াশুনা ও পেশাগত জীবনে খুব ভালো করছে। উত্তর আমেরিকায় মেডিসিনকে সেরা পেশা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর পর আইন, প্রকৌশল, কম্পিউটার, অ্যাকাউন্টিং, ইত্যাদি। আমাদের কমিউনিটিতে এখন অনেক যুবক যুবতীরা এই শীর্ষ পেশাগুলোতে কাজ করছে।
কানাডায় উচ্চ শিক্ষিত বাংলাদেশী এবং বরিশালিরা নিয়মিত ইমিগ্রান্ট হিসাবে আসছেন। তারা বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন এবং উন্নত মানের জীবন যাপন করেন।
গত কয়েক বছর ধরে খুব ধনী বাংলাদেশীরা ইমিগ্রান্ট হিসাবে কানাডায় আসছেন। ভদ্রলোক একটি ব্যয়বহুল বাড়ি কিনে সেখানে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদেরকে রেখে যান যাতে বাচ্চারা ভাল পড়াশুনা করতে পারে। নিজের ব্যবসা দেখাশুনার জন্য তিনি বাংলাদেশে ফিরে যান। তিনি মাঝে মাঝে পরিবারকে দেখতে ক্যানাডায় আসেন। এই ধনী ব্যক্তিদের ঘরগুলি যে এলাকায় আছে সেই এলাকাগুলোকে বেগম পারা বলা হয়, কারণ এই এলাকায় বেগম সাহেবারা পরিবার পরিচালনা করেন।
আমার সম্বন্ধে আরো কিছু জানতে চান ? মোগো বাড়ি কাশিপুর। আমি একটা ক্ষুদ্র মানুষ। আমি কিছু পড়াশুনা করেছি এবং কথা বলতে শিখেছি। তাই ৪০ বছরের বেশি সময় একজন অধ্যাপক হিসাবে মুখের কথা বিক্রি করে জীবিকা অর্জন করেছি। আমি প্রায় ৪0 বছর আগে একটি ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েছিলাম। মাশাআল্লাহ ব্যবসাটা সফল হয়েছে। আমি খুব খুশি আমার ব্যবসার লাভের একটা অংশ দিয়ে আমি ক্যানাডার মসজিদ, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং দাতব্য সংগঠনগুলিকে সহায়তা করতে পারি। তবে আমার বেশিরভাগ কাজ বাংলাদেশে। সেখানে আমি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, গৃহ-নির্মাণ ও অন্যান্য প্রকল্পের সাথে জড়িত। আমাদের ছেলে মাশাল্লাহ বিশ্বের অন্যতম সেরা কিডনি চিকিৎসক এবং গবেষক। সে আমেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের পরিচালক। আমার ছ’টা নাতি-নাতনিরা সবাই পড়াশুনা ও কাজকর্মে উন্নতি করছে। আলহামদুলিল্লাহ।
মন্ট্রিয়ালের Barisal A ssociation প্রবীণ বরিশালীদের সম্বর্ধনা দিয়েছিলো। বা থেকে ডানে : কমান্ডার আব্দুল মাজিদ (গৌরনদী), প্রফেসর আবুল আলম, অফিসার ইউনেস্কো, (উজিরপুর), ড.. আব্দুর রাব্ব (কাশিপুর).

All reactions:
Mosaddak Hossain, Abdur Rahman and 398 others