ঘটনাটি ছিল ছোট, কিন্তু আমার কাছে তার তাৎপর্য ছিল বিশাল। বি.এম. কলেজে আমার দুজন মহান দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন : প্রফেসর কাজী গোলাম কাদের এবং প্রফেসর নুরুল হুদা সাহেব । তাদের প্রভাবেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলম্ ।
দুর্ভাগ্যক্রমে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিলানী আমার একটি পেপারে নম্বর কম থাকায় আমাকে তার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করতে অস্বীকার করলেন । আমি তখন ভর্তির জন্য অন্য তিনটি বিভাগে আবেদন করি: অর্থনীতি, ইংরেজি এবং ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি। তারা সবাই আমাকে ভর্তির জন্য গ্রহণ করেন। আমি অর্থনীতি বিভাগে ক্লাস করা শুরু করলাম।
তবুও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়ার আশা ছেড়ে দেইনি। ভর্তির শেষ দিন আমি দর্শনশাস্ত্রের একজন প্রবীণ অধ্যাপক কাজীমুদ্দিন আহমেদ সাহেবের সাথে দেখা করে তাঁর কাছে আমার পরিস্থিতি বর্ণনা করলাম। এরপর তিনি তার পাশের ঘরে ডক্টর জিলানীর কাছে গিয়ে বললেন, “আব্দুর রব বরাবরই ভালো ছাত্র। আমি ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দিচ্ছি যে সে আমাদের বিভাগে পড়াশোনায় ভালো করবে। অনুগ্রহ করে তাকে ভর্তি করুন।” ডঃ জিলানী তৎক্ষণাৎ আমার ভর্তির ফর্মে স্বাক্ষর করেন, এবং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের একজন গর্বিত ছাত্র হয়ে গেলাম।
আমি ১৯৫৮ সালে দর্শনশাস্ত্রে আমার এম.এ. পরীক্ষা শেষ করি। আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সেই ড. জিলানীই ভাইস-চ্যান্সেলরকে লিখেছিলেন যে তিনি আমাকে তখন থেকেই বিভাগের একজন লেকচারার (এখনকার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর) হিসাবে নিয়োগ করতে চান। ভিসি বিনয়ের সাথে তার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আপনাকে তার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
তিন মাসের মধ্যে আমার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো। মাশাল্লাহ আমার ফলাফল ভালো হলো। যেদিন আমার পিরিক্ষার ফল প্রকাশিত হলো ড. জিলানী সেদিনই আমাকে লেকচারারের চাকরিতে নিযুক্ত করেন। শুধু তাই নয়। তিনি দর্শন বিভাগের পরিচালনার পুরো দায়িত্ব একটি 22 বছর বয়সের যুবককে দিয়ে দিলেন। তখন থেকে পাঁচ বছর পরে আমি ক্যানাডায় চলে আসি। ঐ পাঁচ বছর আমি দর্শন বিভাগ পরিচালনা করেছি। আমি মনে করি আমি একজন প্রশাসক হিসাবে ভালো কাজ করেছি। আমি ডঃ আব্দুর রশিদ এবং সৈয়দ আবদুল হাই সাহেবকে শিক্ষক নিয়োগ করেছিলাম।
ড. জিলানী ভাইস-চ্যান্সেলরকে লিখলেন যে তখন থেকে আব্দুর রাব্ব দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানের চিঠিপত্রে স্বাক্ষর করবে । আবারও ভাইস-চ্যান্সেলর তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাই আমি সমস্ত চিঠিপত্র লিখে টাইপ করিয়ে দিতাম, এবং ডাঃ জিলানী সেগুলো শুধু স্বাক্ষর করতেন।
পরিশেষে একবার ডাঃ জিলানী তার ফাইলিং কেবিনেটে ক্যানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির একটি ছোট ব্রশার খুঁজে পেলেন। এই কাগজের টুকরোটা ছুঁড়ে ফেলার বদলে, তিনি আমাকে দিয়ে বললেন, “এটা রাখো। হয়তো তুমি একদিন এটা ব্যবহার করবে,” আমি তাই করেছিলাম। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডক্টরাল স্টাডি করার জন্য আমার জন্য কোন আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় কিনা তা জিজ্ঞাসা করে ম্যাকগিলকে একটি দুটি বাক্যের চিঠি লিখেছিলাম। এই চিঠি লেখার ফলে আমি পেয়েছি একটি ফোর্ড ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপ আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দীর্ঘ সাত বছরের জন্য ক্যানাডায় সকল খরচ বহন করে, সকলের জন্য দেয় রিটার্ন বিমান ভাড়া, আমাকে দেয় একটি দ্বিতীয় এম. এ. এবং একটি পি. এইচ. ডি ডিগ্রি, এবং পশ্চিম দেশে ৬0 বছরের সফল জীবন। আলহামদুলিল্লাহ।
May be an image of 1 person
All reactions:

Mizanur Rehman, Jamal Hossain and 37 others